কয়েকজন সাদা মানুষ (ধারাবাহিক গল্পঃ পর্ব-২)
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:১১:৩৩ সন্ধ্যা
পারভিনের সাথে সুজনের বিয়েটা পরিবারের সম্মতিতে ই হয়েছিলো। সুজন সবে ভার্সিটি থেকে বের হয়ে এদিক সেদিক ঘুরছে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা আর ভবিস্যৎ পরিকল্পনা করে করে অনেক রাতে বাড়ি ফেরা। আনিস সাহেব তখনো চাকুরিতে। ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি চিন্তিত ছিলেন। তবে চাইছিলেন যেন বি সিএস টা দিয়ে তার মত সরকারি কোন একটা জবে ঢুকে যাক। কিন্তু সব চাওয়া কি পুরণ হয়?
ছেলে এক অজপাড়া গাঁর কলেজে কম্পিউটার স্টাডিজের লেকচারার পোস্টে জয়েন করল। তাকে বুঝাল বি সিএস এর জন্য আপাতত এই চাকুরিটা ই পারফেক্ট। পড়ানো হবে আর নিজেও পড়া যাবে। একটু দোমনা করলেও ছেলেকে অনুমতি দিলেন।
বরগুনা শহরের এক প্রান্তে আয়লা। এখানে এসে সুজনের খারাপ তো লাগল ই না। বরং কলেজের অন্য প্রভাষকদের সাথে খুব দ্রুত বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আশীষ ও জয়নাল ছিলো তাদের ভিতর খুব কাছের।
বন্ধুদের ভিতর বন্ধু!
এমন বন্ধু যার সাথে সব কিছু ই শেয়ার করা যায়।
নিজেকে শেয়ার করে করে শেষ করে দেবার পরেও মনে হয় কিছু ই যেন বলা হল না।
এমন বন্ধু ছিল ওরা দুজন।
যদিও শিক্ষক তারপরও ওরা তিনজন যৌবনকে একটু চেখে দেখতে পিছ পা ছিল না। আশীষ এর যুক্তি ছিল শিক্ষকতা নিজ যায়গায়- আর ব্যক্তি আশীষ এবং তার নিজস্বতা নিজ যায়গায়। তবে এই উপভোগের জন্য প্রয়োজন একটু গোপনিয়তা এবং গাম্ভীর্যের ছদ্মাবরন। যা ওদের ভিতর খুব ভালো ভাবেই ছিল।
এই জন্যই কলেজের ক্লাশ শেষ করে তিন বন্ধু মটর সাইকেলে করে প্রতিদিন চলে যেত সেই নিশানবাড়ী- বাইল্যাতলী। নদীর পাশ দিয়ে মাটির রাস্তা ধরে বাইকে তিন তরুনের মুক্তির যে উল্লাস- রাখাইন পল্লীতে ওদের বানানো সুরার ভিতরে জীবনের মানে খোঁজার চেষ্টা, সবই ছিলো সেই সময়ের প্রয়োজন।
জীবন কাটছিল প্রতিদিন নতুন নতুন রুপ নিয়ে।
দেড়টি বছর কেটে গেলো ভালোভাবে।
একদিন মোবাইলে আনিস সাহেবের ফোন এলো। তখন গ্রামীন এর পোস্ট-পেইড বের হয়েছে কেবল।খুব কম মানুষের কাছেই মোবাইল ছিলো। বরগুনায় নেট ছিলো ই না বলতে গেলে। এর জন্য আলাদা এন্টিনা ব্যবহার করে কোনভাবে লাইন পাওয়া যেতো।
চলে গেলো সুজন বন্ধুদের ছেড়ে চট্টগ্রাম। প্রিন্সিপ্যাল কে বলে কয়েকদিনের ছুটিটা পাস করে নিতেও ভুললো না।
বাসায় এসে মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।সবাই সুজনের বিয়ে প্রায় ঠিক করে ফেলেছে। আনিস সাহেব বললেন-
‘আজ বিকালে জলিলের বাসায় যেতে হবে। ওর মেয়েকে দেখতে। আমি কথা দিয়েছি।‘
বাবার কথার উপর কোনো কথা কখনও বলে নাই। আজও বলল না। তবে মায়ের রুমে গিয়ে মা’র সাথে চেচামেচি করল। এভাবে হঠাৎ করে কিছু না জানিয়ে কেন ওকে ডাকা হল? আর কেনই বা আজ জলিল আঙ্কেলের বাসায় মেয়ে দেখতে যেতে হবে।
বিকেলে পারভিনকে দেখে অবশ্য মাথা কিছুটা শান্ত হল। কিছুটা কেন মনে হল যে, এরই জন্য মনে হয় এত দিন সে অপেক্ষা করে ছিল! তারুন্যের সেই উদ্দামতা যা বরগুনা শহরে এতদিন ওকে ভাসিয়ে নিয়ে চলেছিল- আজ পারভিনে এসে সেই উদ্দামতা যেন একটি দিকের সন্ধান পেল।
হালবিহীন নাবিকের পথের দিশা পাওয়ার মত।
খুব দ্রুত পরের ঘটনা।
দুই পরিবারের ভিতর সম্পর্ক হল। একদিন ঘটা করে আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পারভিনকে বউ করে নিয়ে আসা হল। দিনগুলো যেন ঘোড়ার পিঠে চড়ে চলে গেলো। ছুটি শেষ করে সুজন কলেজে ফিরে গেলো। তবে এবারের সুজন আর সেই সুজন ছিল না।
ওর সেই পরিচিত বরগুনা – আড্ডার তিন বন্ধু সব একই থাকলেও সুজন আর ওর ভিতর ছিল না। ওকে অন্য কেউ নিজের ভিতর টেনে নিয়েছিল।
আনিস সাহেব রিটায়ার করে ঢাকাতে শিফট হলেন। পারভীনও তাদের সাথে। তবে এই যে দুজন দু যায়গাতে- এর ভিতরে ই হয়তো লুকিয়ে ছিল সেপারেশনের বীজ। বিয়ের মাত্র দু বছরের মাথায় ওদের ডিভোর্স হয়ে গেল। তবে এরই মাঝে ওদের মাঝে চলে এসেছিল বাঁধন।
সুজন ও পারভিনের সন্তান। ওদের দুজনকে এক করার জন্য এই বাধনের আসা। কিন্তু তারপর ও...
মোবাইলে কফিলের কল সুজনের চিন্তার স্রোতকে থামিয়ে দিল। ঘড়ির দিকে তাকালো। ৫টা বেজে গেছে। বন্ধুদের জন্য আজ আগেই বের হবে মনে করেছিল।
যাক, ভালো ই হল। কফিলের ফোন না এলে অতীতের জালে আটকা পড়ে থাকতে হত।
ল্যাপটপ ও মোবাইল গুছিয়ে নিয়ে গেটের দিকে আগালো।
এ যেন অতীতের বর্তমানকে সাথে নিয়ে ভবিস্যতের পানে যাত্রা!
(ক্রমশঃ)
বিষয়: সাহিত্য
৮৯২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লেখার শেষে দেখুন ক্রমশঃ রয়েছে।
আপনাকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা।
০ বাংলাদেশের ভিতরে থেকেও দইজন দুই জায়গাতে থাকায় সমস্যা হয়ে গিয়েছিল সুজন আর পারভীনের মধ্যে ।
প্রবাসী ভাইয়েরা এই ধারাবাহিক উপন্যাসে চোখ ই, কাজে দেবে ।
আপনাকে ধন্যবাদ লেখাটি তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের জন্য।
অনেক শুভেচ্ছা রইলো।
সুন্দর মন্তব্যটির জন্য অনেক ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।
আপনার জন্যও একই জিনিস রইলো।
ভালো থাকবেন।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন